বাংলাদেশে ১০০০ পিস লেয়ার মুরগী পালনের হিসাব নিকাশ করতে হলে আপনাকে বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে। বাংলাদেশের স্থান এবং কালবেদে ১০০০ পিস লায়ের মুরগি পালনের হিসাব ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। নিচে এখানে ১০০০ পিস লেয়ার মুরগী পালনের একটি সাধারণ হিসাব দেওয়া হলো।
প্রাথমিক বিনিয়োগ
এক হাজার পিস লাইয়ের মুরগি পালনের ক্ষেত্রে প্রাথমিক কিছু বিনিয়োগ আপনাকে করতে হবে। মুরগির লালন পালনের সমস্ত কিছু তৈরি করতে একটি প্রাথমিক বিনিয়োগ করতে হবে। মুরগির খামার তৈরি থেকে মুরগি কেন এমন ওষুধপত্র সহ এটি প্রাথমিক বিনিয়োগ করা রয়েছে।
মুরগীর খামার স্থাপন
১০০০ মুরগীর জন্য প্রায় ২০০০-২৫০০ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন। জমি ভাড়া বা ক্রয়, শেড নির্মাণ, ফ্যান, লাইট, পানির ব্যবস্থা ইত্যাদি মিলিয়ে প্রায় ২-৩ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে।
মুরগী ক্রয়
একটি লেয়ার মুরগীর দাম প্রায় ৩০০-৪০০ টাকা। ১০০০ মুরগীর জন্য প্রায় ৩-৪ লক্ষ টাকা খরচ হবে।
ফিডার ও ওয়াটারার
প্রায় ২০,০০০-৩০,০০০ টাকা।
অন্যান্য খরচ
ভ্যাকসিন, ওষুধ, শ্রমিক ইত্যাদি জন্য প্রায় ৫০,০০০-১,০০,০০০ টাকা।
মাসিক খরচ
১০০০ পিস লায়ার মুরগি পালনের ক্ষেত্রে মাসিক খরচ কি রকম হতে পারে তার একটি নিচের নমুনা দেওয়া হল। আপনাকে নিয়মিত খাবার কিনতে হবে এমন বিদ্যুৎ পানির বিল ব্যয় ধরতে হবে এবং সেই সাথে আমারে একজন কর্মচারী নিয়োগ দিতে হবে।
টিউশন পাওয়ার উপায় কি ? টিউশন কিভাবে পেতে পারি ?
খাদ্য
একটি লেয়ার মুরগী প্রতিদিন প্রায় ১১০-১২০ গ্রাম খাদ্য খায়। ১০০০ মুরগীর জন্য প্রতিদিন প্রায় ১১০-১২০ কেজি খাদ্য প্রয়োজন। প্রতি কেজি খাদ্যের দাম প্রায় ৩০-৩৫ টাকা। মাসিক খাদ্য খরচ প্রায় ১,০০,০০০-১,২০,০০০ টাকা।
বিদ্যুৎ ও পানি
আপনার খামারে বিদ্যুৎ বিল এবং পানের বিল সবকিছু মিলে প্রায় ১০,০০০-১৫,০০০ টাকা মত খরচ হতে পারে।
শ্রমিক
বর্তমানে একজন শ্রমিকের বেতন প্রায় ১০,০০০-১৫,০০০ টাকা। স্থান ও পরিবেশ বেঁধে এই শ্রমিকের বেতন কম বা বেশি হতে পারে। তবে সব সময় মনে রাখবেন একজন কম বয়সে ছেলেকে নিয়োগ দিতে যাতে কর্মচারীর বেতন ১০ হাজারের চেয়ে কম দিতে পারেন।
অন্যান্য খরচ
ভ্যাকসিন, ওষুধ, রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি জন্য প্রায় আপনাকে ১০,০০০-২০,০০০ টাকা বাজেট করতে হবে।
আয়
এক হাজার পিস লায়ের মুরগি লালন পালনের শুরু থেকে আপনাকে ৬ মাস পর্যন্ত ব্যয় করতে হবে। ছয় মাস পর মুরগি যখন ডিম দেওয়া শুরু করবে তখন আপনার আয় শুরু হবে। ডিম বিক্রি থেকে শুরু করে আপনার কি পরিমাণ আয় হবে তার একটি ছোট্ট নমুনা নিচে দেওয়া হল।
ডিম বিক্রয়
একটি লেয়ার মুরগী বছরে প্রায় ২৮০-৩০০টি ডিম দেয়। ১০০০ মুরগী থেকে মাসে প্রায় ২৩,০০০-২৫,০০০টি ডিম পাওয়া যাবে। প্রতি ডিমের দাম প্রায় ১০-১২ টাকা। মাসিক আয় প্রায় ২,৩০,০০০-৩,০০,০০০ টাকা।
মুরগী বিক্রয়
লেয়ার মুরগী সাধারণত ৭২-৭৮ সপ্তাহ বয়সে বিক্রি করা হয়। প্রতি মুরগীর বিক্রয় মূল্য প্রায় ২০০-২৫০ টাকা। ১০০০ মুরগী বিক্রি করে প্রায় ২-২.৫ লক্ষ টাকা আয় করা যাবে।
লাভ
প্রথম ছয় মাস যখন আপনি খরচ করবেন এবং ছয় মাস পর ডিম বিক্রি করে যখন আপনার লাভ শুরু হবে তখন আপনাকে যোজন বিয়োজন করে একটি লাভ বের করতে হবে।
মাসিক লাভ
মাসিক আয় থেকে মাসিক খরচ বাদ দিলে প্রায় ১,০০,০০০-১,৫০,০০০ টাকা লাভ হতে পারে।
প্রাথমিক বিনিয়োগ ফেরত
প্রাথমিক বিনিয়োগ প্রায় ৬-১২ মাসের মধ্যে ফেরত আসতে পারে।
ঝুঁকি
এক হাজার পিস লাইয়ের মুরগি লালন পালনের ক্ষেত্রে আপনাকে অনেক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে। কারণ লেয়ার মুরগিতে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা যায়। এই রোগ সম্পর্কে আপনি সচেতন না হলে আপনি লস এর সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সহজে অনলাইন থেকে ইনকাম করতে চাইলে এই টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন করুন
মুরগীর রোগ
আপনার খামার যদি অপরিষ্কার থাকে তাহলে রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। রোগ দেখা দিলে আপনার ক্ষতি হতে পারে।
ডিমের দাম
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ অনুযায়ী ডিমের দাম কখনও উচ্চমানের হতে পারে আবার কখনো কখনো একদম নিম্নমানা চলে আসতে পারে। ডিমের দামের উপর ভিত্তি করে আপনার লাভ লোকসান হিসাব হবে। ডিমের দাম কমে গেলে লাভ কমে যেতে পারে।
খাদ্যের দাম
অনেক সময় দেখা দেয় খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে কিন্তু ডিমের দাম কমে গেছে। খাদ্যের দাম বেড়ে গেলে খরচ বেড়ে যেতে পারে। এই সময় আপনার লাভের চেয়ে লোকসান বেশি হতে পারে।
এই হিসাবটি আনুমানিক এবং স্থান, সময়, এবং অন্যান্য অবস্থার উপর ভিত্তি করে পরিবর্তন হতে পারে। তাছাড়া এসব খামারে নামার আগে যারা ইতিমধ্যে কামারের ব্যবসা করেছে তাদের সাথে ভালোভাবে আলোচনা করে অভিজ্ঞতা নিয়ে আপনাকে খামার ব্যবসায় নামতে হবে। প্রথমে শুরুর দিকে একটু লাভ কম হলেও পরেরবার থেকে আপনার অভিজ্ঞতা হয়ে গেলে আপনি এখান থেকে ভালো একটি প্রফিট পেতে পারেন।